আপন ভাইয়েরা যেখানে বোনদের পতিতা বানায়

লিখেছেন লিখেছেন এফ শাহজাহান ১৪ জুন, ২০১৩, ১২:১১:৫৮ দুপুর



দুই বোন ফাহিমা আর অঞ্জনা। তাদেরই আপন ভাই রুহুল আমীন,আনোয়ার ও এনামুল। এই তিন ভাই আর তাদের বউরা মিলে সেই দুই বোনকে পতিতা বানিয়েছেন। এরপর পুলিশ দিয়ে হেনস্তা করে ভ্রাম্যমান আদালতের নাটক সাজিয়ে কারাগারে পাঠিয়েই ক্ষান্ত হননি। এখন দুই বোনকে তিলে তিরে মেরে ফেলতে সমাজপতিদের দ্বারা একঘরে করে রেখেছেন। দুই বোনের কাছ থেকে জোর করে তাদের সম্পত্তি নিতে না পেরেই তাদের এই অবস্থা করা হয়েছে। আমরা তাহলে কোন সমাজে আছি একবার ভাবুন।

এই সমাজে একজন নারী কতটা অসহায় হলে তারই আপন ভাই তাকে পতিতা বানাতে পারে ? এক নারীর দ্বারা আরেক নারী কতটা নির্যাতনের শিকার হলে আপন ভাবি তাকে পতিতা বৃত্তির অীভযোগে মারপিট করে বাড়ি থেকে বের করে দিতে পারে ? প্রশাসন কতটা দুর্নীতিগ্রস্থ হলে তাদের স্বাক্ষ্য প্রমান ছাড়াই জেলে পাঠাতে পারে? আর এই সমাজ কতটা নির্দয় ও অবিবেচক হলে সেই অভিযোগের কোন স্বাক্ষ্য প্রমান ছাড়াই অভিযুক্ত নারীকে একঘরে করে রেখে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারে ? এসব প্রশ্ন সেই পুরোনো কাসুন্দী হলেও বিষয়টি একেবারেই হেলাফেলার নয়। এই একুশ শতকে এসেও আপন মায়ের পেটের ভাই কর্তৃক দুই বোনকে পতিতা বানানো হয়েছে। তাদের সাথে যোগ দিয়েছে পুলিশ প্রশাসন। সমাজ তাদের একঘরে করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তাহলে এখন কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে ঐ অসহায় দুই নারী ?

বগুড়ার শেরপুরের পল্লীতে পৈতৃক ৪ শতাংশ জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে আপন ভাই ও ভাবীরা দুই বোনকে মারপিট করে পতিতা আখ্যা দিয়ে গ্রামের মাতব্বরদের সহায়তায় পুলিশে সোপর্দ করেছেন। পুলিশ তাদের ভ্রাম্যমাণ আদালতে নিলে দুই বোনের ১৫ দিনের জেল হয়। জেল থেকে মুক্তির পর ওই এলাকার সমাজ পতিরা সেই দুই বোনকে একঘরে করে রেখেছে।

এ ঘটনা টি বগুড়ার শেরপুর উপজেলার বিশালপুর ইউনিয়েনর জামাইল গ্রামে। ঘটনার শিকার দুই বোন অঞ্জনা ও ফাহিমা বেগম ওই গ্রামের মৃতমোজাহার আলীর মেয়ে।

অঞ্জনা খাতুন ও ফাহিমা বেগমসহ এলাকাবাসী জানান, তাদের পৈতৃক ৪ শতাংশ জায়গার মধ্যে পৌনে ১ শতকের বসতবাড়ী করে থাকে বড় বোন ফহিমা বেগম । তার ছোট বোন অঞ্জনা ঢাকায় গার্মেন্টে কাজ করেন । অঞ্জনা বাড়িতে এলে গত ৯ মে তাদের ৩ ভাই রুহুল আমিন,আনোয়ারুল ইসলাম, এনামুল হক ও তাদের স্ত্রীরা মিলে অঞ্জনাকে বেদম মারপিট করে। তাদের হাত থেকে ছোট বোন অঞ্জজনাকে রা করতে গিয়ে বড় বোনও মারপিটের শিকার হয়। অঞ্জনা তার ভাই ও ভাবীদের বিরুদ্ধে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেয়। এরপরই শুরু হয় এই নির্দয় নাটকের মুল কাহিনী।

থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) তফিছ উদ্দিন উভয় পকে ১১মে থানায় ডাকেন। ওই দিন সন্ধ্যায় অঞ্জনা ও ফাহিমা দুই বোন থানায় যান। তার ৩ ভাইও গ্রামের মাতব্বর দের নিয়ে থানায় উপস্থিত হন। সেখানে এএসআই তফিছ উদ্দিন বাড়ির জায়গা ভাইদের কাছে বিক্রি করতে বলেন ফাহিমা ও অঞ্জনাকে। কিন্তু তারা ২ বোন জায়গা বিক্রি করতে রাজি না হলে ওই পুলিশ কর্মকর্তা সবার উপস্থিতিতেই তাদের অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে থানা থেকে বের করে দেন।

এরপর গত ১৭ মে এএসআই তফিছ উদ্দিন ওই দুই বোনকে হঠাৎ পতিতা হিসেবে আটক করেন এবং প্রচার করে বেড়ান যে ফাহিমা ও অঞ্জনা পতিতা বৃত্তি করে। তার ভাই ও ভাবীদের এই অভিযোগে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য এএসআই তফিজ উদ্দিনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তার ফোনে সংযোগ পাওয়া যায় নি।

অঞ্জনা ও ফাহিমা জানান, এএসআই তফিছ উদ্দিন তাদের দুই বোনকে থানায় নেওয়ার পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতে হাজির করে। সেখানে আমাদের দুই বোনকে ১৫দিনের জেল দেওয়া হয়। কেন কী কারনে আমাদের জেল দেয়া হচ্ছে তা জানার সুযোগটুকুও আমাদের দেয়া হয়নি। আমাদের বার বার বলা হচ্ছিল তোরা পতিতা।

দুই বোন জানান,জেল থেকে গত ১জুন বাড়িতে ফিরলে গ্রাম্য মাতব্বররা আমাদের একঘরে করার ফতোয়া দেন। একঘরে করার কারণে তাদের সাথে কেউ আর কথা বলে না, কাজে নেয় না,এমনকি তারা কোথাও যেতেও পারেনা।

গ্রামের মাতবর খলিল ও দুলাল জানান, তারা ২ বোন খারাপ প্রকৃতির। তারা মাঝে মধ্যেই নিজেদের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ করে। তাই শাস্তি স্বরুপ আমরা গ্রামের মাতব্বররা মিলে একঘরে করে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

এবিষয়ে শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুল আলম বলেন, তাদের দুই বোনকে পতিতা হিসেবে সাজা দেওয়া হয়নি। ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের ২৯৪ ধারায় অশ্লীল কাজ এবং সমাজে বিরক্ত সৃষ্টির অভিযোগে তাদের সাজা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, পুলিশ তাদের ধরে আনার পর মা ও ভাইদের স্বাীর পরিপ্রেেিত সাজা দেওয়া হয়েছে। তাদের জমিজমা নিয়ে বিরোধের বিষয়টি আমার জানা নেই। এছাড়া তাদের একঘড়ে করে রাখার বিষয়টি আমার জানা নেই।

শেরপুর থানার ওসি আমিনুল ইসলাম জানান, তাদের ভাই ও গ্রামের লোকের দেওয়া স্বাীর ভিত্তিতে ২ বোনের সাজা হয়েছে। জমি নিয়ে তাদের সাথে অবিচার করা হলে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাদের একঘরে করার খবর আমার জানা নেই।

এই হচ্ছে আমাদের সমাজের অবস্থা। তাও আবার সেই সমাজ, যেখানে একজন নারী দেশের প্রধানমন্ত্রী,আরেকজন নারী জাতীয় সংসদের স্পীকার,আরেকজন সংসদের চীফ হুইফ,আর কত নারীতো মন্ত্রী এমপি।

তাহলে যে নারীদের শুধু মুখের কথায় পতিতা বানিয়ে ভ্রাম্যমান আদালতের নাটক সাজিয়ে জেলে ঢুকানো হয় এবং সমাজ তাদের একঘরে করে রাখে, তাহলে সেই নারীরা কোথায় গিয়ে বেঁেচ থাকার অধিকার টুকু পাবে ? এই পৃথিবী কী তাদের জন্য নয়? সেই মানবাধিকার কী এদের জন্য নয় ?

বিষয়: Contest_mother

৫২৪৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File